বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:করোনা–সময়ে আরও একটি দুঃসংবাদ বাঙালির কাছে। বাংলা সাহিত্য আকাশ থেকে খসে গেল আরও একটি নক্ষত্র। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সাংবাদিক–সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে টালিগঞ্জের বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশে) মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায় ১৯৩১ সালে। তাঁর যখন মাত্র তিন বছর বয়স, তখনই তিনি মাতৃহীন হন। বাবা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছেই মানুষ হন। ছেলেবেলাতেই চলে আসেন কলকাতায়। সেই সময়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে রিপন কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়ই তাঁর সাংবাদিকতা শুরু হয়ে যায়।
১৯৫০ সালে ‘লোকসেবক’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তার পরই তাঁর এগিয়ে চলা শুরু। চলে যান দিল্লি। দীর্ঘ ২৫ বছর রাজধানীর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। সেখান থেকে দেশ–বিদেশের বহু জায়গায় তাঁকে যেতে হয়েছে। বহু গুণীজনের সান্নিধ্য পেয়েছেন। দেশ ও বিদেশের বহু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য গড়ে উঠেছিল। জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে তাঁর গভীর যোগাযোগ ছিল। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অনেকবার তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছেন। সাংবাদিকতা করার সময়ই গ্ল্যামার দুনিয়াকেও কাছ থেকে দেখেছিলেন। এই দুই অভিজ্ঞতা তাঁর মৌলিক লেখালেখির ওপর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর লেখা প্রথম গ্রন্থ ‘রাজধানীর নেপথ্যে’। প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। প্রথম বইটিই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। এর পরই তিনি মৌলিক লেখালেখি শুরু করেন। শেষে এই লেখাকেই পুরো সময়ের পেশা হিসেবে বেছে নেন।
তাঁর লেখা ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসটি পাঠকদের কাছে দারুণ সমাদৃত হয়। সিনেমা নির্মাতারাও তাঁর এই উপন্যাস নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায় তাঁর এই কাহিনি নিয়েই তৈরি করেন ‘মেমসাহেব’ সিনেমা। অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার এবং অপর্ণা সেন। সিনেমাটি সুপারহিট হয়েছিল। বাংলা রোম্যান্টিক সিনেমার ক্ষেত্রে এই ছবিটি অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। তাঁর লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ১৫০। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল মেমসাহেব, মিনিবাস, মাতাল, ইনকিলাব, ব্যাচেলার, ইমনকল্যাণ, ডিফেন্স কলোনী, প্রবেশ নিষেধ, কেরানী, ভায়া ডালহৌসী, হকার্স কর্নার, নিমন্ত্রণ, নাচনী, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ডার্লিং, ম্যাডাম, ওয়ান আপ–টু ডাউন, গোধুলিয়া, প্রিয়বরেষু, আকাশ ভরা সূর্য তারা, মোগল সরাই জংশন, ইওর অনার, ককটেল, অনুরোধের আসর, যৌবন নিকুঞ্জে, মৌ, শেষ পরানির কড়ি, বৌবাজারের বৌদি, হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স, পথের শেষে প্রভৃতি।
উপন্যাস ছাড়া অনেক ছোটগল্পও লিখেছেন। উপন্যাস, ছোট গল্প ছাড়াও তিনি ‘বিপ্লবী বিবেকানন্দ’র মতো জীবন আখ্যানমূলক বইও লিখেছেন। সেই বইও অসম্ভব জনপ্রিয় হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবাংলার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান দেন। এ ছাড়া কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্যাসেঞ্জার অ্যামেনিটিস কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছিলেন।